Breaking: অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা🔥

অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা

দীর্ঘ ৪০ বছরের প্রতীক্ষার পর দেশের ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ১,৫১৯টি নিবন্ধিত ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মে মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু হতে পারে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সরকারি উদ্যোগ ও বর্তমান অবস্থা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অতীতে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। এবার নতুন সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দুঃখ ঘোচানোর প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে ৬,৯৯৭টি কোডভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে আরও প্রায় ৫,০০০ মাদ্রাসা রয়েছে, যার মধ্যে ১,৫১৯টি ইআইআইএন নম্বরধারী প্রতিষ্ঠানকে প্রথম ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে। প্রতিটি মাদ্রাসার প্রধানসহ চারজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন, ফলে মোট ৬,০৭৬ জন শিক্ষক এই সুবিধার আওতায় আসবেন। এতে সরকারের খরচ হবে ১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি।

Read More: সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ হবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, শিগগিরই এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। মে মাসের মধ্যে শিক্ষকরা যাতে বেতন-ভাতা পান, সে বিষয়ে কাজ চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১,৫১৯টি মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করার জন্য সারসংক্ষেপ তৈরি শেষ হয়েছে এবং তা যাচাই-বাছাই শেষে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, এই ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার বাইরে যেসব ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আছে সেগুলোকেও সরকারের নীতিমালা ও নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব মাদ্রাসাকে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর (ইআইআইএন) দেওয়ার চেষ্টা করছি।

Read More: সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ হবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

শিক্ষক আন্দোলন ও সরকারী প্রতিশ্রুতি

গত ২৮ জানুয়ারি, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা শাহবাগ অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের সরাতে জলকামান ও লাঠিচার্জ করে, তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব এস এম মাসুদুল হক তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং জানান, পর্যায়ক্রমে এসব মাদ্রাসা জাতীয়করণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এমপিওভুক্ত করার কাজ শুরু হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য ও সমাধনের প্রয়াস

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন ধাপে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে কোনো ধরনের সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। ২০১৮ সালে বাজেট বরাদ্দ থাকার পরও ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি।

বর্তমানে ৮,৯৭২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার মধ্যে মাত্র ১,৫১৯টি সরকারি অনুদান পায়। অন্যদিকে, ৪০,০০০-এর বেশি শিক্ষক বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান করছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা থাকলেও ইবতেদায়ী শিক্ষকদের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একই পদ্ধতিতে পাঠদান করান প্রাথমিক স্কুল ও ইবতেদায়ী শিক্ষকরা। সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা ১১ ও ১৩ গ্রেড অনুযায়ী প্রতি মাসে বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ সব ধরনের সুবিধা পান। অন্যদিকে প্রাথমিকের মতো মাদ্রাসায় একই শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ আছে এমন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ৮ হাজার ৯৭২টি। প্রতিটি মাদ্রাসায় পাঁচজন করে ধরলে শিক্ষক আছেন ৪৪ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার সাড়ে চার হাজার শিক্ষক নামকাওয়াস্তে অনুদান পান। বাকি ৪০ হাজার শিক্ষক বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদানে নিয়োজিত আছেন।

Read More: সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ হবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সরকারের অবস্থান

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষায় একই স্তরের পাঠদান করা হলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য রয়েছে। এটি নতুন বাংলাদেশের শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাই ইবতেদায়ী শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আরও ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি সকল প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর (ইআইআইএন) দেওয়ার কাজ চলবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য এটি হবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।

Read More...

-

Post a Comment

Previous Post Next Post